ক্ষোধার্ত সাহাবী

Sajjadur Rahman

 

হযরত আবু বকর ও উমর (রাঃ) এর ক্ষুধার কাহিনী

প্রচন্ড রোদের মধ্যে হযরত আবু বকর (রাঃ) তাঁর ঘর থেকে বের হয়ে আসলেন। মসজিদ-ই-নববীর দিকে হাঁটতে শুরু করলেন আবু বকর (রাঃ)। পথেই দেখা হয়ে গেল উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) এর সাথে।


আবু বকরকে জিজ্ঞেস করলেনঃ
– “এই গরমের মধ্যে বাড়ি থেকে বের হয়ে আসলেন যে!”
– “কি করবো? দুঃসহ ক্ষুধা তাড়িয়ে নিয়ে এসেছে আমাকে বাড়ি থেকে।”
– “হে আবু বকর, আমি নিজেও যে একই কারণে ঘর থেকে বের হয়ে এসেছি।”


দুজনে কথা বলতে বলতে এগিয়ে গেলেন। হঠাৎ দেখলেন রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এগিয়ে আসছেন তাঁদের দিকে। রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই কথা তুললেন,


– “কি ব্যাপার? এই অসময়ে কোথায় যাচ্ছ তোমরা?”
– “ইয়া রাসুলুল্লাহ! ক্ষুধার কষ্টই আমাদের বাড়ি থেকে বের করে এনেছে।’
– “সেই পবিত্র স্বত্তার শপথ যাঁর হাতে আমার প্রাণ, আমিও যে একই কারণে বের হয়ে এসেছি ঘর থেকে। চলো সামনে এগিয়ে যাই।


তিনজন মিলে হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছলেন আবু আইয়ুব আল-আনসারী (রাঃ) এর বাড়িতে। আবু আইয়ুব (রাঃ) এর স্বভাব ছিল প্রতিদিন রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য খাবার তৈরী করে অপেক্ষা করা। তিনি সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম না এলে বাড়ির সবার সাথে সেই খাবার ভাগাভাগি করে খেতেন আবু আইয়ুব।


সেদিনও অপেক্ষা করছিলেন তিনি। কিন্তু রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাবারের সময় না আসায় তিনি সবাইকে নিয়ে খাওয়া শেষ করে ফেলে বাহিরে গিয়েছিলেন। খাবার শেষ হয়ে গেছে। আর রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর দুই সঙ্গীকে নিয়ে এলেন। তিনি হযরত আবু আইয়ুব আনসারী (রাঃ) এর স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করলেন,


“আবু আইয়ুব কোথায় গিয়েছে?”
– স্ত্রী জবাব দিলেন, “বাহিরে গিয়েছে। এখুনি এসে পড়বে।”


এই অবস্থায় আবু আইয়ুব আল-আনসারী (রাঃ) এসে একছড়া কাঁচা-পাকা-আধাকাঁচা খেজুর নিয়ে এলেন। রসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ


 “এতো খেঁজুর আনলে কেন? শুধু পাঁকা খেঁজুর আনলেই পারতে।”

-তিনি বললেনঃ “সব ধরণের খেঁজুর পেশ করেছি যেটা ভালো লাগে গ্রহন করবেন। অনেক সময় পাঁকা খেজুরের থেকে আধাপাঁকা খেঁজুর মজা লাগে।”


তিনি তাড়াতাড়ি একটি বকরী জবাই করে তা কিছু গোশত আগুনে ঝলসালেন আর বাকিটুকু ভুনা করার ব্যবস্থা করলেন। তাঁর স্ত্রী রুটি বানিয়ে ফেললেন ইতিমধ্যে। মেহমানদের সামনে খাবার পরিবেশন করা হলো এক সময়ে। রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খেতে নিয়ে থেমে গেলেন হঠাৎ। তারপর একটি রুটির উপরে কিছু ভুনা গোশত রেখে সেটি আবু আইয়ুব আনসারী’র হাতে দিয়ে বললেন, “একটু আমার মেয়ে ফাতিমার কাছে দিয়ে এসো এই খাবার। অনেক দিন হয় আমার মেয়ে এমন খাবার খেয়েছে।”


আবু আইয়ুব আনসারী ফাতিমা (রাঃ) খাবার দিয়ে ফিরে এলেন। রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর দুই প্রিয় সাথীকে নিয়ে খাবার খেলেন। খাবার শেষে খাবারের দিকে তাকিয়ে রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “রুটি, গোশত, খুরমা, পাকা ও আধ-পাকা খেজুর!” এইটুকু বলতেই গলা ধরে এলো তাঁর। দু’চোখ ভর্তি পানি নিয়ে আবার কথা বললেন রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম,


“মহিমান্বিত আল্লাহ পাকের শপথ, এইসবই হচ্ছে সেই নিয়ামত – যার বিষয়ে তোমাদেরকে কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে।” অতঃপর তিনি পড়লেনঃ

ثُمَّ لَتُسـَٔلُنَّ يَومَئِذٍ عَنِ النَّعيمِ★
“এরপর অবশ্যই সেদিন তোমরা নেয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।” [সুরা তাকাসুরঃ ৮]


এত কষ্টের পর খাবার খেয়ে হিসেবের কথা শুনে সাহাবীগণ অবাক হয়ে বললেনঃ “এই খাবারেরও হিসেব দেয়া লাগবে?” রসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ “তোমরা যখন কোন নিয়ামত গ্রহণ করার জন্য হাত বাড়াবে, তখন ‘বিসমিল্লাহ’ ( ﺑﺴﻢ ﺍﻟﻠﻪ ) বলবে। তারপর তৃপ্তি নিয়ে খাবার শেষ করার পরে
বলবে – আল’হামদুলিল্লাহিল্লাযি হুয়া আশবা’আনা ওয়া আন’আমা ‘আলাইনা ওয়া আফদ্বালা’
( ﺍﻟﺤﻤﺪ ﻟﻠﻪ ﺍﻟﺬﻱ ﻫﻮ ﺃﺷﺒﻌﻨﺎ ﻭﺃﻧﻌﻢﻋﻠﻴﻨﺎﻭﺃﻓﻀﻞ )

অর্থঃ “সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ পাকের যিনি আমাদেরকে পরিতৃপ্ত করেছেন এবং আমাদেরকে নিয়ামত দান করেছেন যা অনেক উত্তম।”


তাহলে এই দুয়া আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ের জন্য যতেষ্ট হবে।

— আল্লাহ রহম করুন — আমিন–আলহামদুলিল্লাহ



[#সুত্রঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদীস থেকে। হায়াতুস সাহাবাঃ খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৫১৫ – ৫১৮ আত তারগীব ওয়াত তারহীব, জাকিউদ্দিন আব্দুল আযীম আল-মুনযিরি (রহিমাহুল্লাহ) সুওয়ারুম মিন হায়াতিস সাহাবাঃ খন্ড ১, পৃষ্ঠা ১২৪ – ১৩০]

 

আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু ক্ষুধার তাড়নায় অজ্ঞান।

আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু ক্ষুধার তাড়নায় অজ্ঞান হয়ে পড়তেন। মাটিতে ছটফট করতেন। তাঁর এমন অবস্থা দেখে লোকজন তাঁকে মৃগী রোগী ভেবে তাঁর ঘাড়ের ওপর পা রাখতো!
রাসূলুল্লাহর ﷺ জীবদ্দশায় তিনি ছিলেন ফুলটাইম স্টুডেন্ট। এর বাইরে তাঁর কোনো পেশা ছিলো না। মসজিদে নববীতে থাকতেন, কেউ খাবার দিলে খেতেন।
 
তাঁর যখন প্রচণ্ড ক্ষুধা লাগতো, তখন কোনো কোনো সাহাবির সাথে হেঁটে হেঁটে তাঁর বাড়ি পর্যন্ত যেতেন এই আশায় যে- সেই সাহাবি যদি বলেন, “আসুন, খেয়ে যান।”
জ্ঞানার্জন করতে গিয়ে তিনি কী পরিমাণ কষ্ট সহ্য করেছেন সেটা আমাদের চিন্তার বাইরে। 
 
অথচ আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহুর স্বচ্ছল জীবনের ইতিহাসও আছে। এই ইতিহাস কয়জন জানেন?
তিনি বাহরাইনের গভর্নর হন। গভর্নর থাকাবস্থায় সেখানে ব্যবসা করেন এবং মেয়াদ শেষ হলে মদীনায় ফিরেন ১০,০০০ দিরহাম নিয়ে। 
 
যে আবু হুরাইরা এতো গরীব ছিলেন, খেতে পারতেন না, সেই আবু হুরাইরা হঠাৎ করে ‘কোটিপতি’ হওয়ায় উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর মনে সন্দেহ জাগলো। তিনি দুর্নীতি করেননি তো? এতো সম্পদের মালিক হলেন কীভাবে? 
 
খলিফা উমর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বাহরাইন পাঠান। ব্যাপারটা খুবই সিরিয়াসলি নেন। কারণ, উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু সেই গরীব আবু হুরাইরাকে দেখেছেন, নতুন আবু হুরাইরা তাঁর কাছে অপরিচিত।
তদন্ত রিপোর্ট খলিফার কাছে জমা হলো। দেখা গেলো আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হালালভাবেই সম্পদশালী হয়েছেন। 
 
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু সম্পদশালী হবার পর নিজের দুর্দিনের কথা ভুলে যাননি। তিনি একদিন কাতানের দুই রঙা কাপড় পরেন, কাতানের কাপড় দিয়ে নাক পরিষ্কার করে বলেন, “বাহ আবু হুরাইরা, বাহ! আজ তুমি কাতানের কাপড় দিয়ে নাক পরিষ্কার করছো, অথচ গতকাল তুমিই নবিজীর মিম্বার আর ঘরের মাঝখানে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকতে আর লোকজন তোমাকে মৃগীরোগী ভেবে তোমার ঘাড়ের ওপর পা রাখতো। অথচ ক্ষুধার কারণে তুমি এমনটা করতে!” (সহীহ বুখারী: ৭৩২৪) 
 
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহুর জীবনের প্রথম অংশ আমাদের কাছে এতো বেশি আলোচনা হয়, তাঁর কথা উঠলেই আমাদের মনে হয়- সেই আবু হুরাইরা, যিনি ক্ষুধার জ্বালায় অজ্ঞান হতেন!
অথচ তিনিও একসময় উপার্জন করেন, সম্পদশালী হন।
তাঁর পরের ইতিহাস যদি না জানেন, তাহলে তাঁর জীবনী জানা তো কমপ্লিট হলো না। 
 
আমরা বেশিরভাগ সাহাবিদের জীবনী অর্ধেক জানি। আরো নির্দিষ্ট করে বললে- রাসূলুল্লাহ ﷺ জীবিত থাকাবস্থা পর্যন্ত যতোটুকু সাহাবিদের আলোচনা পাই, সেটাকেই মনে করি সাহাবিদের জীবনী!
‘কোটিপতি সাহাবি’ বইটি হলো সাহাবিদের জীবনের বাকি অর্ধেক, যেই অর্ধেকের আলোচনা কেউ করে না। 
 
যেই আলোচনা নেই বলেই আমরা দুনিয়াতে কীভাবে উপার্জন করতে পারি, উপার্জনের আদর্শ মডেল কেমন হতে পারে, সেটা সাহাবিদের কাছ থেকে শিখতে পারি না। সেটা শেখার জন্য ইউটিউবের মোটিভেশনাল স্পিকার আর স্টিভ জবস, বিল গেইটস হয়ে গেছেন আমাদের ‘একমাত্র’ অনুপ্রেরণা।
আপনি হালালভাবে সম্পদশালী হতে চাইলে মূলনীতি গ্রহণের ক্ষেত্রে এই যুগেও যে সাহাবিরা আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা হতে পারেন, ‘কোটিপতি সাহাবি’ পড়ে সেটা উপলব্ধি করতে পারবেন। 
 
স্লামডগ মিলিয়নিয়ারদের জীবনের ঘটনা পড়ে আমরা অনুপ্রাণিত হই। অথচ আমাদের সাহাবিরা শূন্য থেকে পরিশ্রম করে কোটিপতি হয়েছেন, সেই ইতিহাসের চাইতে অনুপ্রেরণার ইতিহাস আর কী হতে পারে?
 
 
 
সাহাবিগণ ক্ষোধায় পেটে পাথর বাধা

জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, খন্দকের যুদ্ধের শুরুতে আমরা পরিখা খনন করছিলাম। এ সময় এক খণ্ড শক্ত পাথর দেখা দিল। তখন লোকেরা এসে নবী (সা.) -কে বলল, খাল খননকালে একটি শক্ত পাথর দেখা দিয়েছে (যা কোদাল কিংবা শাবল দ্বারা ভাঙা যাচ্ছে না)। তখন নবী (সা.) বললেন, আচ্ছা, আমি নিজেই গর্তে নামব।

 অতঃপর তিনি (সা.) দাঁড়ালেন, সে সময় তার পেটে পাথর বাধা ছিল। আর আমরাও তিনদিন যাবৎ কিছুই খেতে পাইনি।(ثُمَّ قَامَ وَبَطْنُهُ مَعْصُوبٌ بِحَجَرٍ وَلَبِثْنَا ثَلَاثَةَ أَيَّام لانذوق ذوقا )

(নবিজীর পেটে বাধা পাথর বরকতময় ও নবিজীকে হত্যা করার জন্য আবু জাহেলের নিক্ষেপ করা পাথর বরকতময় এবং সেটির কলিমা পড়া, এই দুই পাথর সংরক্ষণ নিয়ে নানা মিথ্যা কাহিনী সমাজে প্রচলিত আছে। 

মিথ্যা কাহিনীটি এমন

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে হক্কানী আঞ্জুমান নামে আজানগাছী পীরের একটি দরবার রয়েছে। সে দরবারে রয়েছে দু’টি পাথর। কুষ্টিয়া জেলার রাজারহাট বাজারের পশ্চিম পার্শ্বে এ দরবারের অনুসারীদের একটি মসজিদ রয়েছে। সে মসজিদের দেয়ালে উক্ত দরবারের একটি প্রচারপত্র ঝুলানো রয়েছে। তাতে এ পাথর দু’টির পরিচয় সম্পর্কে বলা হয়েছে :

‘এ পাথর দু’টির একটি হচ্ছে আবু জেহেলের হাতে কালিমা পাঠকারী পাথর। আর অপরটি হচ্ছে সেই পাথর যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্ষুধার তাড়নায় তাঁর পেট মোবারকে বেঁধেছিলেন। এ পাথর দু’টি পীর পরম্পরায় মক্কা শরীফের দ্বীন মুহাম্মদ নামের এক মুআল্লিমের কাছে সংরক্ষিত ছিল। তিনি স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে তা আজানগাছী পীরকে দান করেছিলেন।’ আমাদের দেশেও এ পীরের ভক্তবৃন্দ রয়েছেন।

তারা ঢাকাস্থ হাইকোর্টের উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত শাহবাগ শাহী মসজিদে এবং বায়তুল মুকাররম মসজিদে প্রতি সপ্তাহের মঙ্গলবারে একত্রিত হন বলে এ প্রচার পত্রে লিখিত রয়েছে। এ পাথর দু’টি সংরক্ষিত হওয়ার ঐতিহাসিক কোনো ভিত্তি না থাকা সত্ত্বেও আজানগাছী পীর সাহেব এদু’টি পাথরকে সে মু‘আল্লিমের হাত থেকে মহা মূল্যবান পাথর হিসেবে গ্রহণ করেন এবং কলিকাতার হক্কানী আঞ্জুমানে রেখে এর জন্য যিয়ারতের একটি বেদ‘আত জারী করেন। তিনি এ দু’টি পাথরকে বিভিন্ন মারাত্মক রোগ থেকে মুক্তি, বিপদাপদ দূরীকরণ ও রূহানী শক্তি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে মহা উপকারী বলে ঘোষণা দেন।)

এমতাবস্থায় নবী (সা.) কোদাল হাতে নিয়ে পাথরটির উপর আঘাত করলে তা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে বালুকণায় পরিণত হয়। 

 জাবির (রাঃ) বলেন, [নবী (সা.)-কে ক্ষুধার্ত অবস্থায় পেয়ে] আমি আমার স্ত্রীর কাছে এসে বললাম, তোমার কাছে কি খাওয়ার মতো কিছু আছে? কেননা আমি নবী (সা.) -কে ভীষণ ক্ষুধার্ত দেখেছি। তখন সে একটি চামড়ার পাত্র হতে এক সা’ পরিমাণ যব বের করল আর আমাদের পোষা একটি বকরির ছানা ছিল। তখন আমি সেই ছানাটি যাবাহ করলাম এবং আমার স্ত্রীও যব পিষল। অবশেষে আমরা হাঁড়িতে মাংস চড়ালাম। 

অতঃপর নবী (সা.) -এর কাছে এসে তাকে চুপে চুপে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা আমাদের ছোট একটি বকরির বাচ্চা যাবাহ করেছি। আর এক সা যব ছিল, আমার স্ত্রী তা পিষেছে। অতএব আপনি আরো কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে চলুন। (এ কথা শুনে) নবী (সা.) উচ্চৈঃস্বরে সকলকে ডেকে বললেন, হে খাল খননকারীগণ! আসো, তোমরা তাড়াতাড়ি চল, জাবির তোমাদের জন্য খাবার প্রস্তুত করেছে।


অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তুমি যাও, কিন্তু আমি না আসা পর্যন্ত মাংসের ডেকচি নামাবে না এবং খামিরগুলো নবী (সা.) -এর সামনে আগিয়ে দিলে তিনি তাতে মুখের লালা মিশালেন এবং বরকতের জন্য দু’আ করলেন। অতঃপর ডেকচির কাছে অগ্রসর হয়ে তাতেও লালা মিশিয়ে বরকতের জন্য দু’আ করলেন। এরপর তিনি (আমার স্ত্রীকে লক্ষ্য করে) বললেন, তুমি আরো রুটি প্রস্তুতকারিণীকে আহ্বান কর, যারা তোমাদের সাথে রুটি বানায় এবং চুলার উপর হতে ডেকচি না নামিয়ে তা হতে নিয়ে পরিবেশন কর।

 (জাবির রা. বলেন) সাহাবীদের সংখ্যা ছিল এক হাজার। আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি, সকলে তৃপ্তি সহকারে খেয়ে চলে যাওয়ার পরও তরকারি ভর্তি ডেচকি ফুটছিল এবং প্রথম অবস্থার মতো আটার খামির হতে রুটি প্রস্তুত হচ্ছিল। (বুখারী ও মুসলিম

বিঃদ্রঃ- এই ঘটনাটিকে জাবের রাঃ এর দুই ছেলের মৃত্যুর কাহিনী বানিয়ে মিথ্যা প্রচার করা হয়ে থাকে।

 

 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

মহানবি সাঃ এর মুখের লালা।

শয়তান যে ৩ কাজে মানুষকে সবচেয়ে বেশি ধোঁকা দেয় ।

মুসলিম সমাজে মসজিদের ভূমিকা