মুসলিম সমাজে মসজিদের ভূমিকা


মুসলিম সমাজে মসজিদের ভূমিকা

                                    - লেখক: হাফেজ মাও: সাজ্জাদুর রহমান

প্রারম্ভিকতা:- মসজিদ শব্দটি আরবি:( مسجد‎‎) উচ্চরণ:ˈমাসজিদ)শব্দটির উৎপত্তি আরবি "السجود" থেকে, যার আভিধানিক অর্থ শ্রদ্ধাভরে মাথা অবনত করা অর্থাৎ সিজদাহ করা বশ্যতা স্বিকার করা।পরিভাষায় বলা যায় মুসলমানদের দলবদ্ধভাবে নামাজ পড়ার জন্য নির্মিত স্থাপনা। সাধারণভাবে, যেসব ইমারত বা স্থাপনায় মুসলমানেরা একত্র হয়ে প্রাত্যহিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ (আরবি: صلاة‎‎ সালাত) আদায় করেন, তাকে মসজিদ বলে। আবার যেসব বড় আকারের মসজিদগুলোতে নিয়মিত নামাজের সাথে সাথে শুক্রবারের জুম'আর নামাজ আদায় করা হয় এবং অন্যান্য ইসলামিক কার্যাবলী যেমন: কোরআন শিক্ষা দেওয়া  হয়, সেগুলো জামে মসজিদ (مسجد جامع) নামে অভিহিত।

মুসলিম সমাজে মসজিদের ভূমিকা

মুসলিম সমাজে মসজিদের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। সারা বিশ্বে ২৫ লক্ষেরও বেশি মসজিদ রয়েছে। বাংলাদেশের ১লক্ষ ৪৭হাজার ৫৭০ বর্গ কি.মিটারের মধ্যে ২লাখ ৫০হাজার ৩৯৯টি মসজিদ রয়েছে।বাংলাদেশের পার্শবর্তি রাষ্ট্র ভারত মহাদেশে ৩লক্ষাধিক মসজিদ রয়েছে। এমনি ভাবে সারা পৃথিবীতে ২৫লক্ষ মসজিদে যদি ২জন করেও খাটি মুসলিম থাকে তাহলে এই অর্ধকোটি মুসলিম বদরের যুদ্ধের ঘটনায় উজ্জিবিত হয়ে সমস্ত ইহুদী খৃস্টানদের বিরুদ্ধে তাজা রক্ত ঢেলে দিতে সদা প্রস্তুত।

সম্মানিত পাঠক বৃন্দ

মসজিদ সভ্য সমাজ গঠনে সবচেয়ে বেশি অগ্রনি ভূমিকা পালন করে। মসজিদ মুসলমানদের বিভিন্ন ধর্মীয় কার্যাবলীর প্রাণকেন্দ্র।এখানে প্রার্থণা করাছাড়াও শিক্ষা প্রদান, তথ্য বিতর়ণ ,বিচার কাজ সম্পাদনা,রাজনীতি ও সমাজ পরিচালনা, বিবাহ এবং বিরোধ নিষ্পত্তি সহ নেতৃত্ব ও   আনুগত্বের শিক্ষা প্রদান করা হয়।

মসজিদ সম্পর্কে মহানবি (স:) বলেন “খইরু জুলুসিল মাকানি আল মাসাজিদ”

অবস্থান করার জন্য সবচেয়ে উত্তম স্থান হচ্ছে মসজিদ। রাসুল (স:) অন্য একটি হাদিসে বলেন “আফজলুল বিলাদি ইলাল্লহি মাসাজিদুহা ওয়া আফগজুল বিলাদি ইলাল্লহি আসওয়াক্বুহা” পৃথিবীতে আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় স্থান হচ্ছে মসজিদ আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট স্থান হচ্ছে বাজার।


Click hare

 

মুসলিম সমাজ গঠনে মসজিদের বিশেষ দিক সমুহ।

১।আল্লাহর ইবাদত: মসজিদ আল্লাহর নিকটে সর্বাধিক প্রিয় স্থান। সেখানে কেবল তাঁরই ইবাদত করতে হবে। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন,ওয়া আন্নাল মাসাজিদা লিল্লাহী ফালাতাদউ মাআ’ল্লহী আহাদা‘ আর মসজিদগুলো কেবলমাত্র আল্লাহরই জন্য, কাজেই তোমরা আল্লাহর সঙ্গে অন্য কাউকে ডেক না’ (সুরা জিন)।  মসজিদ মুসলমানদের ইবাদতের স্থান। এখানে আগতদের উদ্দেশ্য থাকে কেবল ইবাদত করা।যেহেতো মসজিদ পবিত্র স্থান সেহেতো সর্বদিক থেকে মসজিদের পবিত্রতা রক্ষা করা সকলের দায়ীত্ব ও কর্তব্য।

২।মসজিদ একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: মসজিদ আল্লাহর ঘর মুসলমানের প্রতিক। মসজিদ একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এখানে আল্লাহর ইবাদতের পাশাপাশি ইমাম কতৃক সমস্ত মুসল্লিদেরকে নিতি নৈতিকতা, আদর্শ, কোরআন শিক্ষা, হালাল হারাম জায়েজ নাজায়েজ সহ যাবতীয় মাসআলা মাসায়েল শিক্ষা প্রদান করা হয়।অতএব মসজিদের হেফাজত এবং মসজিদ নির্মানের বিকল্প নেই। মহানবি (স:) বলেন “মান বানা লিল্লাহি মাসজিদান বানাল্লহু বাইতান ফিলজান্নাতি” অর্থ:- যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য একটি মসজিদ নির্মান করবে আল্লাহ তায়ালা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মান করবেন।

৩। ভ্রাতৃত্ববোধ জাগরণ: মহানবি (স:) বলেন “আল মুসলিমু আখুল মুসলিম” (মুসলমান মুসলমানের ভাই) 

পৃথিবীর ইতিহাসে এমাত্র মসজিদের মাধ্যমে মুসলিম জাহানের মাঝে যুগযুগ ধরে  ভ্রাতৃত্ববোধ তৈরী হয়ে আসছে। তারি ধারাবাহিকতায় আজ সারা পৃথিবীতে ২৫ লক্ষ মসজিদে নিদৃষ্ট সময়ে সালাত আদায় করা হয়ে থাকে। সেখানে ধনি-গরিব, সাদা-কালো, বেটে-লম্বা এর মাঝে কোন ভেদাবেদ থাকেনা। সকলে কাধে কাধ মিলিয়ে সারিবদ্ধ হয়ে সর্বোচ্চ সু-শৃঙ্খলভাবে তারা ইবাদত বন্দেগী করে। 

৪।সময়ানুবর্তিতা: পৃথিবীতে যত জাতি উন্নতি সাধন করেছে তার মূলে রয়েছে  Discipline (সময়ানুবর্তিতা)।

আর সেই সময়ানুবর্তিতা সু-নিয়ন্ত্রিত হয় মসজিদের মাধ্যমে। বর্তমানে মুসলিম অমুসলিম প্রাই সব জাতিই তাদের কাজে যোগদান, অফিস, ব্যবসা ইত্যাদির সময় মেনটেইন করে মসজিদের মুয়াজ্জিনের আজানের মাধ্যমে। আল্লাহ তায়ালা কোরআনুল কারিমে বলেন “ইন্নাস সলাতা কানাত আলাল মুমিনিনা কিতাবাম মাওক্বুতা” (নিশ্চয় নামাজ নিদৃষ্ট সময়ে আদায় করা মুমিনদের উপর আবশ্যক।

৫।মক্তব পদ্ধতি: মুসলিম সমাজের প্রতিটি মানুষের উচিত্ ইসলামের বিধিবিধান জানা ও মানা। আর মসজিদ যেহেতো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান তাই অন্যান্য রাষ্ট্রের মসজিদ গুলো সহ বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি মসজিদেই রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কতৃক প্রতিষ্ঠিত ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর মক্তব। সেখানে শিক্ষা দেয়া হয় কোরআনুল কারিম, শিক্ষা দেয়া হয় মাসআলা মাসায়েল সহ আদব কায়দা ও নীতি নৈতিকতা।

৬।বিবাহ: বিবাহ একটি চির প্রবিত্র বন্ধন যা হারামকে হালাল করে দেয়। রাসুল (স:) এর ভাষ্য অনুযায়ী বিবাহ কারয মসজিদে করা সুন্নত। তাই মুলিম সমাজের লোকজন কাজটি এলাকা ভিত্তিক মসজিদের ইমামের মাধ্যমে করে থাকে।

৭।পার্লামেন্ট: মুসলমানের প্রধান পার্লামেনট হচ্ছে মসজিদ। মসজিদের ইমামই হচ্ছে জনগনের নেতা। এক সময় মসজিদই ছিল পার্লামেন্ট। এখনো প্রায় ১২ লক্ষ মসজিদে পার্লামেন্টের কাজ হয়ে থাকে। তাই ইসলামের নিতি অনুযায়ী জুম্মার নামাজ পরাবে রাষ্ট্রনেতা। বাগেরহাটের ষাট গুম্বুজ মসজিদ খানজাহানের পার্লামেন্ট ছিল। আমাদের দেশের সরকারও বিশেষ কোন ঘোষনা জনগনের কাছে পৌছে দেওয়ার জন্য প্রতিটি মসজিদের ইমাম বরাবর নোটিশ পাঠিয়ে থাকেন। এছাড়াও মসজিদের মাধ্যমে বিভিন্ন মাহফিল, সমাবেশ, ২ ঈদের নামাজের আয়োজন ও সাধারণ বিচার কাজ পরিচালনা করা হয়ে থাকে।

৮।বিরোধ নিষ্পত্তিকরণ: মসজিদের মাধ্যমে মুসলিম সামাজিক বিরোদ নিষ্পত্তি করা হয়ে থাকে। পরস্পর ঝগড়া-বিবাদ, হিংসা-বিদ্বেষ, অন্যায়-অবিচার, সাম্প্রদায়ীক দাঙ্গা, জাতিগত ও ধর্মীয় বিরোধ নিস্পত্তি মসজিদের মাদ্যমে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে করা হয়ে থাকে।

 শেষ কথা: পরিশেষে সমস্ত মুসলিম জাতির উদ্দেশ্যে আমি বলতে চাই আসুন আমরা মসজিদের পবিত্রতা রক্ষা করি। স্বেচ্ছায় মসজিদ মাদরাসায় দান করি। মসজিদ মাদরাসার নামে ভিক্ষাবৃত্তির হাত থেকে সমাজকে কুলষিত মুক্ত করি। মসজিদ আল্লাহর ঘর, মসজিদ মুসলিম সমাজের আশ্রয়স্থল। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে কোরআন ও হাদিস অনুযায়ী আমাদের জীবন পরিচালনা করার তাওফিক দান করুন।-আমীন 


#hasan solution

#sajjadr rahman

#shekh s rahman

#mawlana sajjadur rahman 


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

মহানবি সাঃ এর মুখের লালা।

শয়তান যে ৩ কাজে মানুষকে সবচেয়ে বেশি ধোঁকা দেয় ।