ইমানের লেবেল কত? একটু রিয়েলাইজ
Sajjadur Rahman
ইমানের লেবেল কত? একটু রিয়েলাইজ
এক পর্যটক বাংলাদেশ থেকে যাওয়ার সময় বলেছিলেন- "আমি নাস্তিক ছিলাম। এদেশ আমাকে আস্তিক বানিয়েছে। এত অনিয়মের মাঝে একটা দেশ চলে কিভাবে? নিশ্চয়ই উপর থেকে কেউ না কেউ নিয়ন্ত্রণ করছেন। নাহলে সম্ভব নয়।"
ফুটওভার ব্রীজের নীচ দিয়েই ব্যস্ততম রাস্তা পার হতে দেখে ব্রীজটা হয়তো ফ্যালফ্যালিয়ে পথচারীর দিকে তাকিয়ে নিজেকে নিরর্থক মনে করে।
করোনার মত এরকম মরণঘাতী ভাইরাসকে বুড়ে আঙ্গুল দেখিয়ে আমাদের মা-বোনেরা শপিংও করতে যায়। ড্রেসটা কিনতে হবে। কিছু মনে করেও করতে পারিনা। হয়তো বাসায় পড়ার মত দ্বিতীয় কাপড়টি তাদের নেই।আজকে না কিনলে বাসায় উলঙ্গ থাকতে হবে। এরকম পরিস্থিতিতে মোবাইল ফোন, ল্যাপটপের দোকানগুলোও রমরমা ব্যবসা করে যাচ্ছে। বাঁচতে হলে যেন মডেলটা চেঞ্জ করতেই হবে।
দেশে নিশ্চিত আক্রান্ত ১৮ জনের পর ১৯তম আক্রান্ত ব্যক্তিটা আমিও হতে পারি এই শংকায় যখন আমি আছি, তখন কতজনে মরণকে তুচ্ছজ্ঞান করে ট্যুর মেরে ছুটির সদ্ব্যবহার করছে। বলে, "কপালে করোনা থাকলে যেখানেই থাকি হবে, ভয় কিসের?" ঈমানের কি লেভেল মাইরি! অথচ গত শুক্রবার জুমু'য়ায় গেছে কিনা সন্দেহ।
আল্লাহ্ ভরসা বলে আজো প্যারাসুট ছাড়া বিমান থেকে লাফ দেয়নি কোন ঈমানদার পাইলট। আল্লাহ্ ভরসা বলে মাঝ সাগরে লাফিয়ে পড়েনি কোন নাবিক। আল্লাহু আকবার বলে শুকর জবাই করলে যেমন হালাল হয়না, আল্লাহ্ ভরসা বলে বিষপান করলে তেমন বাঁচাও যাবেনা।
আগে নিজের সচেতনতা, তারপর আল্লাহ্ ভরসা। রাসূল (স) এক সাহাবীকে বলেছিলেন, "আগে উট বাঁধো, তারপর আল্লাহর উপর ভরসা করো।রশি ছেড়ে নয়।"
পয়েন্ট মাস্ট বি নোটেড
-
পর্যটন স্পটগুলোতে কেন নিষেধাজ্ঞা কর্তৃপক্ষকে জারি করতে হবে? মানুষের মরণের ভয় নেই?
ভার্সিটি থেকে বাসায় এসেছি।বাসায় জানাইনি সারপ্রাইজ দেব বলে।গেটে আমার আওয়াজ পেয়ে আম্মু আনন্দে দুই হাত বাড়িয়ে দিয়ে জোর কদমে আমাকে জড়িয়ে ধরতে এসেছে।আমি আম্মুর সেই ভালবাসাকে তখন প্রত্যাখ্যান করেছি।
বলেছি আমার কাছে পরে আসেন, আমি ফ্রেশ হয়ে নিই।
আমি গণপরিবহনে করে লম্বা জার্নি করে এসেছি। আমি নিশ্চিত না যে আমি পথ থেকে ভাইরাস বয়ে আনিনি। সো কিভাবে আমার আম্মুকে জড়িয়ে ধরব। আমি আক্রান্ত হলে আমার পরিবার আক্রান্ত হবে।
তারপর আমার পরিবার থেকে মহল্লা, গ্রাম, ইউনিয়ন, শহর; হতে পারে এভাবে পুরো জাতি আক্রান্ত হয়ে যাবে।
মুখে মাস্ক দেখে অনেকেই বলে, "কিরে, করোনা ধরছে নাকি" বলে দিবেন, "তুই কি করোনা থেকে খোদা প্রদত্ত নিরাপত্তাপ্রাপ্ত? যে আক্রান্ত হবি না।"
আমি মুসলমান, আমি আক্রান্ত হবনা। এইটা চরম ভুল ধারণা। মুসলমান মহামারীতে আক্রান্ত হয়না বা হবেনা এরকম কোন দলীল নাই। বরং আক্রান্ত হবে এই দলিল হাদীসে আছে।
মসজিদে গেলে বাসা থেকে একটা জায়নামাজ নিয়ে যান। একটা পাক রুমাল পকেটে রাখুন, সিজদার জায়গায় দিয়ে নিবেন। পরে বাসায় এসে ধুয়ে নিবেন। মসজিদ পবিত্র! তাই বলে মসজিদে বাচ্চা প্রস্রাব করলে ধুইতে হয়না তা কিন্তু নয়।
উন্নত দেশগুলো যেখানে পর্যাপ্তর চেয়ে বেশী প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিয়ে মানুষ বাঁচাতে পারছেনা সেখানে আমাদের দেশের অবস্থা কি হবে ভাবতে পারেন? একবার ছড়িয়ে গেলে এক সপ্তাহে দেশটা মরাখলা হয়ে যাবে। চল্লিশা খাওয়ার লোক বাকী থাকবেনা।
পর্যাপ্ত থার্মাল স্ক্যানার নাই; টেস্ট কীট্ নাই; মাস্ক, স্যানিটাইজার, ডাক্তার, নার্স, চিকিৎসা কেন্দ্র সংকটের দেশে সচেতনতাই এই মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আবার বেশী সচেতন হইতে গিয়া একসাথে দোকান থেকে দুই কার্টুন হ্যান্ডওয়াস, তিন ডজন পকেট স্যানিটাইজার কিনে ঘরে মজুত করে সংকট তৈরী না করে পরিমাণমত কিনুন। অন্যকে কিনতে দিন।
নিজে বাঁচুন, অন্যকে বাঁচতে দিন।
আগে সচেতন থাকুন, তারপর রাব্বে কারীমের কাছে বলুন, "হে সর্বশক্তিমান! আমি আমারটুকু করেছি, এবার আপনি রক্ষা করুন!"
লিখা: মাহ্দী ফয়সাল
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন